বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৫০৩

পুরান ঢাকায় বেড়েছে ডেঙ্গু, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা 

ফয়সাল আহমেদ জবি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬ আগস্ট ২০২৩  

সারা দেশের মতো পুরান ঢাকায় বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। যা নিয়ে আতঙ্কিত এখানকার বসবাসরত শিক্ষার্থীরা। গেঞ্জি এলাকা হওয়ায় চারদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সাথে প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, টাইফয়েড সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল এন্ড কলেজ সহ এখানে আছে প্রায় ১০ টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 

পুরান ঢাকার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে বসবাস করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল না থাকায় তারা বসবাস করে বিভিন্ন ভাড়া বাড়ি, মেস এবং হোস্টলে। 

ইতোমধ্যে এই এলাকায় বসবাসরত বেশিরভাগ শিক্ষার্থী জ্বর, সর্দি, কাশিসহ বর্তমান সময়ের আতঙ্কিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রুদ্র সরকার নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে গত ৩রা আগস্টে। 

রাজধানীর অন্যতম জনবহুল এলাকা পুরান ঢাকা হওয়ায় অন্য যেকোনো স্থানের তুলনায় এখানেই ডেঙ্গু  আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। দীর্ঘ দিনের বৃষ্টিতে নানা জায়গায় জমা পানিতে এডিস মশার লার্ভা সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

(বুধবার) পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে পানি জমে এডিস মশার লাভা জন্ম লাভ করেছে। বিশেষ করে বাহাদুর শাহ পার্কের পেছনে খোলা ড্রেনে বৃষ্টির পানিতে লাভার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। সেই সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ড্রেন গুলোতে একই চিত্র দেখা গেছে। কিছু ড্রেনে তো সবসময়ই জলাবদ্ধতা লেগে থাকে এবং কয়েকটি স্থানে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ দেখা যায়।

জলাবদ্ধ স্থানগুলোর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের পিছনে, ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় ফটকমুখী রাস্তার বামদিকে, রফিক ভবনের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে, বিজ্ঞান অনুষদের দুইদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমেটরির সামনে, প্রধান ফটকের রাস্তার দুই পাশে, কলা অনুষদের সামনের অংশের ড্রেনগুলোসহ বিভিন্ন স্থানে এসব জমে থাকা পানি দেখা যায়।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বোটানিক্যাল গার্ডেনের কোল ঘেঁষে স্তূপ হয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। ছাত্রীদের কমনরুমের পেছনে দেখা গেছে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ যেখানে প্রতিনিয়ত জন্মাচ্ছে এডিস মশা। এছাড়াও ভাষা সৈনিক রফিক ভবনের পাশে, প্রশাসনিক ভবনের আশেপাশে, বিজ্ঞান অনুষদের আশেপাশের ড্রেনসহ প্রত্যেকটি ড্রেনে একটু বৃষ্টি হলেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

এদিকে পুরান ঢাকার আশেপাশে হাসপাতালে (ন্যাশনাল হস্পিটাল, সুমনা হসপিটাল, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মডার্ন পপুলার ডায়াগনস্টিক এবং মেডিনোভা হাসপাতালে) খোঁজ নিতে দেখা যায় প্রায় অধিকাংশ বেডে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি।

 জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আরজুমা আক্তার খুশি ডেংগু জ্বরে আক্রান্ত হয়। যার কারনে তার দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় ব্যাঘাত ঘটে। হাস্পাতাল হতে এসে যেয়ে পরীক্ষায় নামে মাত্র অংশগ্রহণ করেন সে শিক্ষার্থী। 

তিনি জানান, তিনি যে হোস্টেলে অবস্থান করের সেখানকার চারপাশে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। তাছাড়া সন্ধ্যায় উন্মুক্ত পাঠাগারে পড়তে আসে। সেখানেও সন্ধ্যার পর হতে মশার উপদ্রব বেড়ে যায়।, তিন দিন ধরে জ্বর এবং ভমি অনুভব করারলে তিনি ন্যাশনাল হাস্পাতালে ডেংগু পরিক্ষা করান। তিনি আরো বলেন ক্যাম্পাসে নানা সংগঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডেংগু নিধন অভিজান সহ নানা কার্যক্রম চালালেও তা শুধু ছবি তোলা সহ ফেসবুক পোস্টেই আবদ্ধ। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ ড্রেনগুলোর অবস্থা নাজেহাল। আমরা নতুন করে ড্রেনগুলো সংস্কার কাজে হাতে নিয়েছি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ জমে আছে দ্রুত সময়ে সেটা সরানোর ব্যবস্থা করছি। শীঘ্রই ক্লিনার টিম ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ সম্পন্ন করবে।

এছাড়াও তিনি বলেন, ভবনের ছাদে যে মশার আবাসস্থল আছে এ সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব।

এই বিভাগের আরো খবর